দশম হিজরী। ৯ই যিলহজ্জ। রাসূলুল্লাহ ﷺ লক্ষাধিক সাহাবী নিয়ে উপস্থিত আরাফাতের ময়দানে। সকাল থেকে তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সাহাবায়ে কিরাম নিয়ে। দ্বিপ্রহরে তিনি দাঁড়ালেন খুতবাহ দেওয়ার জন্য। ঐতিহাসিক সেই বিদায় হজ্জের ভাষণ দিলেন মানবতার শান্তি, মুক্তি আর সাম্যের বার্তা দিয়ে। কোন মাইক্রোফন, লাউড স্পীকার কিংবা বেতার কানেকশন ছাড়াই লক্ষাধিক সাহাবী ক্লিয়ারলি শুনলেন তাঁর প্রতিটি কথা।
খুতবাহ শেষ করে সকলের কাছ থেকে তার দাওয়াতী কাজের স্বতস্ফুর্ত স্বীকৃতি গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।” তিনি সকলকে সালাম জানালেন এবং জুমু'আ ও আসর নামাজ এক সাথে আদায় করলেন। যাতে সারা দিন তিনি দু‘আর মধ্যে মগ্ন হতে পারেন; নামাযের বিরতি কিংবা অন্য কোন কারণে তার দু‘আ আর বিঘ্নিত না হয়। নামাজের পর, রাসূলুল্লাহ ﷺ আকাশের দিকে হাত তুললেন। সমস্ত দিন, বিরতিহীনভাবে দু‘আ করতে থাকেন—ঘন্টার পর ঘন্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে! এমনকি সাহাবায়ে কিরাম তাঁর মুবারক বগলের নূরানী শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছিলেন আকাশের দিকে তাঁর উঠিয়ে রাখার কারণে। ভাবুন তো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আর আল্লাহর মধ্যে সেই অমলিন কথোপকথনটা কেমন ছিল! ২৩ বছরের ঝড়-ঝঞ্জা, টাঠ্টা-বিদ্রুপ, নির্যাতন-নিপীড়ন! আর আজ তিনি এসেছেন আল্লাহর দ্বীন ও নি‘আমত পূর্ণতার সনদ নিয়ে!
এদিকে সাহাবায়ে কিরামগণ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সকাল থেকে কিছু খাচ্ছেন না, আরাফাতের দিনের রোযার কারণে। তারা আগে থেকেই আরাফার দিনে রোজা রাখার অভ্যস্ত ছিলেন। কারণ আরাফার রোজার হুকুম এসেছে সাত/আট বছর আগে। হাজীদের আরাফার ময়দানে যাওয়া আরম্ভ করারও বহু আগে। কেননা, ঈদ উল আদহার হুকুম নাযিল হয়েছে দ্বিতীয় হিজরিতে আর হজ্জের হুকুম এসেছে নবম হিজরিতে। তাই সাহাবায়ে কিরাম নিশ্চিত ছিলেন না যে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিবছরের ন্যায় আজ হজ্জরত অবস্থায়ও রোজা রেখেছেন কিনা। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ এত গভীরভাবে দু‘আয় নিমজ্জিত ছিলেন, কেউ তাঁকে এ অবস্থায় জিজ্ঞাসা করতেও সাহস পাচ্ছিলেন না যে তিনি রোজা রেখেছেন কিনা, কিংবা আজকে রোযা রাখা হবে কি না।
উম্মুল মুমিনীন সাইয়িদা মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহা এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন, সাহাবায়ে কিরাম তীব্র পিপাসায় অতিষ্ট, তারা প্রচন্ড গরমে পানিশূন্যতায় কাহিল হয়ে পড়ছেন—আরাফাতের সেই ময়দানে, যেখানে কোন এয়ার কন্ডিশনড তাবু ছিল না, ছিল না কোন আরামের ব্যবস্থা। সাহাবায়ে কিরাম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দিকে তাকিয়ে আছেন, বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি রোজা রেখেছেন কিনা।
হযরত মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাথায় এক বুদ্ধি এল। তিনি এক গ্লাস দুধ নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার দিকে তাকালেন, গ্লাসটি হাতে নিয়ে বুঝতে পারলেন কী হচ্ছে পেছনে। তিনি গ্লাসটি উপরে তুলে ধরলেন, যাতে সবাই দেখতে পারেন। যেন সবাই বুঝতে পারেন তিনি দুধ পান করতে যাচ্ছেন। তারপর তিনি তা পান করলেন। আর তখন সাহাবায়ে কিরাম বুঝতে পারলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আজ রোযা রাখেন নি। তারাও পানি পান করলেন, তৃষ্ণা নিবারণ করলেন। সুবহানাল্লাহ কী মনোরম সেই দৃশ্য!
ইয়া আল্লাহ! আজ আরাফাতের ময়দানে লক্ষ লক্ষ মুমিন-মুমিনাতের হৃদয়ের স্পন্দন আর চোখের ক্রন্দনের ধ্বনি তুমি শোন। তোমার হাবীবের সেই মধুময় স্মৃতির উসীলায় তাদের দু‘আগুলোকে কবূল করে নাও। আমাদেরকেও বারবার তাওয়াফে খানায়ে কা‘বা নসীব করো। মিনা, মুযদালিফা আর আরাফাতের ময়দানে দীনহীন ফকিরের বেশে কাফনের সাদা কাপড়ে বারবার হাযির হওয়ার তাওফীক দান করো। গোলামকে মুনিবের বাড়ির দরজায় বারবার ডেকে নিও, মাওলা।
@Khairul Huda Khan
#Arafat #arafah #আরাফা #আরাফাত